প্রিয়,
দুনিয়ার সকল বাংলা ভাষাভাষী। যাঁরা এই চিরকুট পড়া শুরু করতে যাচ্ছো, যাদের এই লেখা পড়তে কোনো কষ্ট হয়না এমনকি আগামী প্রজন্মের জ্ঞানপিপাসু, অনুসন্ধানী নব তরুণ, যারা মেধা বিকশিত হওয়ার পথে ও ভালোমন্দ বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করেছো। যারা সত্যকে জানার জন্য উদগ্রীব থাকে প্রতিনিয়ত, তাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালামসহ একরাশ অগ্রিম শুভেচ্ছা ও চিরকুট পড়ার ভুবনে সু-স্বাগতম।
তোমাদের জন্য আমার কিছু কথা ভবিষ্যতের জন্য বলে যেতে চাই, কিছু কথা রেখে যেতে চাই, যে কথাগুলো হবে তোমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য, জীবন চলার পথে শক্তি ও মুক্তি আবার হয়তো মহাচিন্তার কারণ। তবে জেনে রেখো এটাই সত্য ও বাস্তবতার নিরিখে লেখা অপ্রিয় সত্য বাণীই হবে তোমাদের আগামীর পথচলার, ভবিষ্যৎ গড়ার পথনির্দেশক। যদি এই চিরকুটের কোনো চরণ তোমাদের জীবন চলার পথে এগিয়ে যাওয়ার কারণ কিংবা কাজে এসেছে মনেহয় তাহলেই হবে আমার লিখে যাওয়া চিরকুটের সার্থকতা।
শুরুতে বলতে চাই "চিরকুটটা" সম্পূর্ণ পড়ার মনমানসিকতা ও ধৈর্য ধরে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি লাইন পড়তে হবে দ্রুত পড়তে যেয়ে হয়তো কোনো লাইন বাদ দিয়ে চলে যাবে ফলে মূল বিষয়বস্তু বুঝতে বিচ্যুতি ঘটাবে। কোনো কথা শুনার ক্ষেত্রে ঠিক তদ্রূপ পন্থা অবলম্বন করতে ভুল করো না।
* * * মনে করো চিরকুটের শুরুটা পড়েই তোমরা অর্জন করলে জীবন যুদ্ধের বড় নিয়ামক "ধৈর্য"।
"ধৈর্য/অপেক্ষা/সবুর/Wait যা কিছু সম্বোধন করা হোকনা কেন তোমাদের সামনের দিনগুলো জীবনসংগ্রামের জয়-পরাজয়ের কারণ হবে "ধৈর্য পরীক্ষা"। এই পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারলেই তোমরা হবে প্রতিটি কাজের এক একজন সফল ব্যক্তি।
তোমাদের মধ্যে হয়তো অনেকে স্কুল পড়ুয়া আবার অনেকে আর্থিক টানাপোড়েনের জন্য সম্ভব হয়নি তাই বলে মন খারাপ করো না। স্কুল পড়ুয়ার প্রতি কোন হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকো ফলে তোমাদের মাঝে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হবে। আর যে বা যারা স্কুলের গন্ডি পেরুতে সক্ষম হওনি তোমরা খুঁজে নাও তোমাদের পারিবারিক অবস্থা। হয়তো দেখা যাবে বা তোমাদের পিতার স্বচ্ছলতা/অস্বচ্ছলতা। যদি দেখতে পাও স্বচ্ছল থাকার পরেও তোমার পরিবার তোমার পড়াশুনার চেয়ে তোমার কাছ থেকে ইনকাম আশা করছে তখন তুমি নিজে নিজে অনুশোচনা কর তোমার কোনো কাজের জন্য, অবহেলার জন্য, নাকি তুমি পরিবারের অবাধ্য কিনা, যার ফলে পরিবারের এমন আচরণ করছে? আবার এটাও ভেবো পরিবার /পিতার অক্ষর জ্ঞানহীনতার কারণে হয়ে থাকলে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করো আর পিতার কাজে সহায়তা করার ফাঁকে শিক্ষা অর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরো প্রয়োজনে এটাও বলে দাও আমাকে নাহয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করছো কিন্তু তোমার মৃত্যুর পর আমকেও অজ্ঞ করে যাবে? সমাজে কি কেউ মূল্যায়ন করবে? এমনকি আগামী প্রজন্মকে? দেখবে নিশ্চয়ই পিতার একগুঁয়েমিভাব দূর হয়ে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। তাও যদি কাজ নাহয় নিজেকে বদলিয়ে ফেলো, যেমন আমি বদলিয়েছিলাম। আমি মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় মাধ্যমিকের কিছু ছাত্রকে পড়াতাম আবার ছোটবেলা থেকে আর্ট করাই পারদর্শী ছিলাম বলে কিছু কিছু টাকা উপার্জন হতো যার ফলে পড়াশোনায় প্রভাব ফেলতে দিইনি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলোনা বলেই এই পথ অনুসরণ করা। অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে আমার বেড়ে ওঠা। তুমিও কিছু একটা কাজে লেগে পরো দেখবে পড়াশোনা ঠিকই চালিয়ে যেতে অসুবিধা হবেনা যেহেতু পিতার চাওয়াটা পুষিয়ে দিবে।
* * * এর ফলে সৃষ্টি হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, কর্মঠ হওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি, বিরাজ করবে পারিবারিক শান্তি।
সঙ্গ দোষে জীবন হয়ে যাবে বিপর্যস্ত। আশা করছি কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছ। বয়সে বয়সে নিজেকে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়, তা হলো নিজের মধ্যে থাকা চঞ্চলতা ভাব পরিহার করা, অসৎ সঙ্গ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। যেমনঃ নারী সংক্রান্ত হতে পারে, মাদকাসক্তির কারণ হতে পারে, নোংরা রাজনীতিতে জড়িয়ে অপকর্মের কারণও হতে পারে, নেশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে পূর্ব থেকে সতর্ক হয়ে যাওয়ায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বাস্তবতা উপলব্ধি করলে বুঝতে পারবে যখন তোমার শক্তি, মেধা, মোটর বাইক, অর্থ থাকবে তখন তোমাকে সবাই ব্যবহার করবে, তোমার অনেক বন্ধু সৃষ্টি হবে, একটি বিশাল গ্রুপের নেতৃত্ব তোমার হাতে চলে আসবে, মনে হবে তখন তুমি যা করতে চাও সবকিছুই সফল হবে, অযথা ঝগড়া করার নাহয় পেশিশক্তি প্রদর্শন করার ইচ্ছা জাগবে, রীতিমতো উগ্র মেজাজে কথা বলবে, কে বড়, কে ছোট তখন সম্মান দেখিয়ে কথা বলা ভুলে যাবে, কোনো ছোট ভুলকে বড় অপরাধে রূপ দেওয়ার ইচ্ছে হবে, মনুষ্যত্ব লোপ পাবে তখন অন্য কারো কথাকে অগ্রাহ্য করতে দ্বিধাবোধ করবেনা, মনে রেখ তোমার শক্তি, মেধা, অর্থ যখন ফুরিয়ে যাবে তখন তোমার দিকে ফিরে থাকানোর কারো সময় থাকবেনা এমনকি তোমার অতীতে করে যাওয়া কোনো কাজ বা ত্যাগ সবকিছু ভুলে তোমার করে যাওয়া অপরাধ গুলো তুলে ধরে তোমাকে তাদেরকে এড়িয়ে চলতে বাধ্য করবে। তখন বুঝতে কষ্ট হবেনা কি করলাম, কি করা উচিত ছিলো। তাই অনুশোচনা করার আগেই যদি নিজেকে বদলিয়ে ফেলা যায় তাহলে তোমার/তোমাদের জন্য সুন্দর আগামী অপেক্ষা করবে।
* * * এর ফলে নিজের চরিত্রের প্রতি সজাগ হবে, বিভিন্ন অপকর্ম থেকে বাঁচার, মানবিকতা, আত্মসম্মানবোধ উপলব্ধিসহ সর্বোপরি একজন আদর্শ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
মনে রেখো এই জীবনের চলার পথে চোখে পড়বে নানান অসঙ্গতি, দেখতে পাবে একের পর এক অনিয়মের চিত্র, নিজের চোখের সামনে দেখবে দূর্নীতি কাকে বলে, চিনতে পারবে কে তোমার বন্ধু আর কে তোমার শত্রু আবার এ-ও দেখতে পাবে বন্ধুর বেশে আড়ালে শত্রুতার অদৃশ্য ছায়া অথচ তোমাকে দেখাবে মায়া, হাতও বুলিয়ে দিবে মাথায়, বুঝে নিবে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী খুব কাছের মানুষকে যাদের তুমি বড় সম্মান দেখাতে, এ-ও দেখার বাকি থাকবেনা আপন ভাই থেকে কিভাবে আপন ভাইকে শত্রু বানিয়ে দে নানান কৌশল অবলম্বন করে, হয়তো তুমি/তোমরা সব জেনেও কিছু করতে পারবেনা লোকলজ্জার কারণে, দেখিয়ে দিতে বা প্রতিবাদ করার সে অবস্থাও থাকবেনা। তবে মনে রেখ সেসব মানুষগুলোর প্রতি সজাগ থেকো নাহয় দশজনের সামনে তোমরা লজ্জায় পরবে। কারণ যারা ধোঁকা দিতে বা চল-চাতুরী করতে জানে সেসব মানুষগুলোর কথা মিষ্ট হবে, পোশাকআশাকে তাদেরকে বুঝাও কঠিন হবে। এক্ষেত্রে নিজেকে খুব অসহায় মনে কর তাহলে এসমস্ত লোকের মুখোশ অন্যজনের কাছে শেয়ার করে রেখো, নাহয় উল্টো তোমাদেরকে ঘায়েল করবে তোমাদের পক্ষে সাফাই গাইবে এমন কেউ খুঁজে না-ও পেতে পারো কিন্ত অন্যজনকে তোমাদের পূর্ব থেকে শেয়ার করার মাধ্যমে একটু সাহস পাবে, স্বাক্ষী থাকবে। তোমাদের সামনেই ঘটে যাবে আর দেখতে পাবে নির্দোষীকে দোষী সাব্যস্ত করে হাজতে যেতে, তখন তোমাদের বাকশক্তি-শ্রবনশক্তি লোপ পাবে, দেখতে পাবে চোখের সামনে কিভাবে নিরীহ মানুষকে ঠকায় আর টাকা কি না বলায়, তখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে যেওনা যতক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ কোনো আওয়াজ না তুলে। নাহয় সব কিছুর দায়ভার নিজেকে বহন করতে হবে। হ্যাঁ এটাও না করার জন্য বলবোনা স্পটে প্রতিবাদের চেয়ে একটু সময় নিয়ে যৌথ প্রতিবাদে সম্পৃক্ত হবে। সবচেয়ে কষ্ট অনুভব করবে আর যখন দেখবে তোমাদের আপন রক্তের ভাইকে তোমাদের কাছ বিভিন্নভাবে সত্যমিথ্যা বলে কান ভারী করিয়ে দুরত্ব সৃষ্টি করে দিবে যা কেন এমন করছে, কার কথায় করছে তা জেনেও বলার সাহস থাকবেনা কারণ দেখতে পাবে যাকে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে দেখতে পাও সে-ও তোমার সাথে তাল মিলিয়ে মিষ্টিসুরে কথা বলবে যা সন্দেহ করার কোনো অবকাশ রাখবেনা। এমন সময় তোমার করণীয় হবে ভাইয়ের সাথে সরাসরি কথা বলে নেওয়া, নাহয় দিনদিন দুরত্ব বৃদ্ধি পাবে আসল কথা এড়িয়ে যাবে, সৃষ্টি হবে ক্রোধ। কাউকে অন্তর থেকে সম্মান দেখাতে দেখাতে যদি মনে করো সে সম্মান নিতে জানেনা বা উল্টো তোমাদেরও বুঝতে দেয়না তাই বলে বিরক্তি প্রকাশ করিওনা কারণ হয়তো উনার প্রকাশের ভাষা পুনরায় দিতে পারছেননা। যদি বার বার সম্মান দেখানোর পর অন্যের বেলায় সবজান্তা মনে কর তাহলে পরদিন থেকে সম্মান দেখানো থেকে কয়েকদিন বিরত থাকো দেখবে নিজ থেকে তোমাকে জিজ্ঞেস করবে। ভুল করেও কারো সাথে গীবত করতে যেও না, কারণ তুমি/তোমরা যাকে আপন ভেবে বলে যাবে একদিন তারাই তোমাদেরকে সবার সামনে সত্য তুলে ধরে অপমান করবে তখন নিজের কাছে অপমানবোধ লাগবে।
* * * এর ফলে আত্নবিশ্বাস বেড়ে যাবে তোমরা হবে আত্নবিশ্বাসী, মানুষের ভয়ংকর রূপ চোখের সামনে দেখতে পাবে ফলে মানুষের চরিত্রগত দিক সম্পর্কে অবগত হবে, বুঝে যাবে এক কদম সামনে দিলে দু-কদম পিছেয়ে কেন দিতে হয়।
মনে রেখো স্বার্থের জন্য মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। স্বার্থান্বেষী মহল নিজের স্বার্থসিদ্ধ চরিতার্থ করার জন্য হোক সেটা উদ্দেশ্য প্রবন, হোক সেটা অস্তিত্ব রক্ষার। মনে রাখতে হবে, যে তোমার পিছে লেগেছে তার সাথে তোমার পেরে ওঠা সম্ভব হচ্ছে কিনা, এমনও হতে পারে হামলা, মাললাসহ হত্যার মত জঘন্য অপরাধে, সেটাই মাথায় রাখতে হবে কার দূর কতটুকু। হয়তো নিজেই বুঝতে পারছো তোমার পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব হবেনা তখন তোমার উচিত হবে সত্যের পথে থেকে বিষয়টি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করা। পেশিশক্তির প্রভাব দেখাতে যেওনা কারণ সেটাই হবে শত্রুতার অন্যতম সূত্রপাত। এমনও ঘটে যেতে হাজার টাকার জন্য লাখ টাকা খরচ করবে, মানসম্মানে একটু আঘাত লাগলে মানহানি মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করবে। দিন-রাতের চব্বিশটি ঘন্টা হিসাব নিকাশ করে এগুতে হবে মনে রেখ বই পুস্তকের পড়াশোনা আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়, বাস্তবতা থেকে যে শিক্ষা অর্জন করবে সেটা বইয়ে না-ও পেতে পারো। আরো কিছু বিষয় আছে যা প্রতিটি পদে পদে উপলব্ধি করবে।
যেমনঃ তুমি/ তোমরা যখন একটু সাবলীল হবে, নিজেকে গড়ে তুলতে যেয়ে কত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করবে কিন্তু ভালো পরামর্শ কিংবা সহযোগিতার লোক পাবেনা তবে এটা মাথায় রেখো সংগ্রামের মাঝে বেড়ে ওঠার সিঁড়ি আশার প্রদীপ দেখায় অর্থাৎ উচ্চ স্থানে আসীন হবে তখন একদল লোক চাইবে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলতে সুতরাং নিজেকে এমনভাবে গড়ার অঙ্গিকার করো যেন তোমাদেরকে টেনে নামানোর জন্য কোনো অবস্থাতেই লাগাম না পায়। এতে করে শিক্ষা নিবে...
* * * কোথায় কেমন করে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। কারো চল-চাতুরীর আশ্রয় নিলে বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে, কার প্রতি কতটুকু আন্তরিক বা কতটুকু সম্মান দেখানো প্রয়োজন, তা অবগত হয়ে যাবে। বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক ধারনা পাবে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মত থেকে ভালো দিকটি লোফে নিতে পারবে।
মনে রেখো যেখানে সেখানে নিজেকে খুব চালাক, সবজান্তার বা বুদ্ধিমান জাহির করতে যেয়ো না, এটা সবসময়ই ধারণা পোষণ করে চলবে তোমার/তোমাদের চেয়ে আরো চালাক, বুদ্ধিমান লোক থাকবে যা প্রথমে ধরা দিবেনা বরং তোমাদের ভুলত্রুটি হওয়া মাত্রই দেখিয়ে দিবে। কারো বিপদ মুহুর্তে ছাড়া সবসময় যেকোনো কাজে আগে ঝাঁপিয়ে পরতে যেয়ো না। আবার এমন কিছু কাজ আছে যেগুলোতে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য তোমাকে/তোমাদের উদ্বুদ্ধ করবে। যেমনঃ অন্যায় কাজে, যেখানে তোমাদের যাওয়া অনুচিত সেখানে যারাই খুব সাহস দিয়ে তোমাদের যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে শুধু একবার বলে দেখে পরীক্ষা করবে আপনি যান প্রয়োজনে আমি পরে যাবো তখনই দেখবে হয় মেজাজ দেখিয়ে আবোলতাবোল বলে চলে যাবে নাহয় নিজেকে আড়ালে রেখে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে নেমে পরবে। তখনই বুঝতে পারবে আসল উদ্দেশ্য কি।
* * * এতে করে তোমরা সে শিক্ষাটাই অর্জন করবে, নিজের বুদ্ধিমাত্রা ব্যবহার সম্পর্কে কৌশলী হবে, কঠিন বিপদ মুহুর্তে ফেলে দেওয়া মুখগুলোকে চিনতে পারবে।
তোমাদের প্রতি অনুরোধ রইল, সর্বদা সফল ব্যক্তির পেছনে সময় নষ্ট করিওনা কারণ কিছু সময় সেখানে দিও যাঁরা বারে বারে ব্যর্থ হওয়ার পরে সফল হয়েছেন তাঁদের ব্যর্থতার গল্পে। কিছু সময়ের জন্য জানতে চেষ্টা করতে বলা হচ্ছে তাঁদের ব্যর্থতার গল্পের জীবন কেননা তোমরা মনে করবে সফলতা আপনা-আপনি আসবে বা এসে যায়। এখানে কিছু তুলে ধরা হলো যার ফলে সেদিকে আর সময় ব্যয় না করে নিজেদের গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট হবে। যেমনঃ তোমরা আজ নাহয় কাল শুনবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা। এই আমেরিকা রাষ্ট্রের ১৬তম সফল প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সফল মানুষদের একজন যাঁর পেছনের গল্প ব্যর্থতায় ভরা। ২৩ বছর বয়সে চাকরি হারান, ২৯ বছর বয়সে নির্বাচনে হার, ১৯৪৮ সালে ৩৯ বছর বয়সে আব্রাহাম লিংকন ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার হওয়ার জন্য নির্বাচন করে পরাজিত হন, ৪৯ বছর বয়সে সিনেটর হওয়ার জন্য নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। অবশেষে ৫২ বছর বয়সে ১৮৬১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এতো ব্যর্থতার পরও তিনি হার মানেননি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত পুরো জীবনটায় ব্যর্থতার গল্প তারপর থেকে বদলে দেন পৃথিবীর ইতিহাস।
পড়াশুনা যেহেতু করবে অবশ্যই আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা শুনবে। তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত ও সফল একজন বিজ্ঞানীদের একজন। পড়াশুনায় ভালো ছিলোনা, কথা বলা শিখতে ৪ বছর লেগে যায়, জুরিখে সুইস পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি, বাবা সবসময় গর্দভ বলে আফসোস করতেন এই ছেলে কিছু করতে পারবে না আর বাবার সে কথাটি আইনস্টাইন বহুদিন কষ্ট চেপে রেখেই তিনিই হয়ে ওঠেন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়ে যান "নোবেল পুরষ্কার"। তাঁর ছিলো চেষ্টা আর অধ্যবসায়। সেজন্য তোমরা তোমাদের মত করে গড়ার চেষ্টা করো, আব্রাহাম লিংকন কিংবা আইনস্টাইন হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। এমনি করে আরো অনেকেই আছে যাঁদের প্রথম জীবন এতোটাই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা ভাষা প্রকাশ করার মতো নয়। তোমরা শুনে থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী একজন ব্যক্তি ছিলো যিনি পরপর ৬ বার একটানা শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে যার সম্পদের পরিমান অকল্পনীয়, নাম তাঁর "বিল গেটস" বর্তমান যুগে কম্পিউটারে নানান কাজ সম্পাদিত হচ্ছে। তার অবদান হলো আজকের এই কম্পিউটার বিল্পবের পেছনে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন মাইক্রোসফটের জনক "বিল গেটস"। বলতে চেয়েছিলাম উনার প্রথম প্রজেক্টটি সফল হয়নি তাঁর জীবনেও ব্যর্থতার গল্প রয়েছে। তোমরা এ-ও শুনবে চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী ধনকুবেরের নাম " জ্যাক মা" তাঁর জীবনে ব্যর্থতার গল্প শুনলে চোখে পানি আসবে, কারণ জ্যাক মা কলেজে পড়াশোনার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ৩বার ফেল করে ৪র্থ বার সুযোগ পান। পরবর্তীতে পুলিশে চাকরি করতে গিয়ে ১০ জনের নিয়োগ পরীক্ষায় ৯ জনের চাকরি হয় কিন্তু জ্যাক মা বাদ পড়ে যান এমন অনেক চাকরিতে বাদ পরে যান। KFC-তে ২৪ জনের পরীক্ষায় ২৩ জনের চাকরি হলেও বাদ পরে গেলেন জ্যাক, হার্ভার্ডে ১০ বার পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হন অবশেষে আলী বাবা প্রতিষ্ঠা করে সফলতার মুখ দেখেন। মূলত আলী বাবা হল চীনের একটি মাল্টি ন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি। যার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। এভাবে চার্লি চ্যাপলিনের জীবন ব্যর্থতায় ভরা, টমাস আলবা এডিসন, উইস্টন চার্চিল। এতে করে তোমাদের যে শিক্ষাটা হবে তাহলো-
* * * সফল ব্যক্তির জীবনে ঘটে যাওয়া ব্যর্থতার অতীত স্মরণ করে সময় নষ্ট করা থেকে বেঁচে যাবে, যা আর দ্বিতীয় বার জানার প্রয়োজন হবেনা তবে হতাশ না হয়ে ব্যর্থতা থেকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় সেটাও উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, সফল হওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করার প্রতি অনিহা দেখা দিবেনা বরং সামনে এগিয়ে যেতে স্পৃহা সৃষ্টি করবে।
আমি জানি আমার প্রতিটি কথা পড়ার পর তোমাদের কাছে বিরক্তি চলে আসবে সেটা ঠিক তবে যা বলছি সবকিছু তোমাদের জীবনে না ঘটুক কিন্তু ঘটার সম্ভাবনা বেশি। মনে রেখো তোমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারো প্রতিনিয়ত সেটা হলো "ধর্ম" নিয়ে, যা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ভুল করেও নয়, মজার ছলেও নয় ধর্ম নিয়ে কোনো মন্তব্য কোনো বন্ধুর সাথে, কোনো তর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এমনকি তুমি/তোমরা যা সত্য জানো সেটার উপরেও নয় কারণ তুমি/তোমরা যেটা সত্য হিসেবে নিশ্চিত হচ্ছো বিপরীতে সেটাকে মিথ্যা হিসেবে গণ্য করতে চাইবে সুতরাং তা থেকে বিরত থেকো। খুবই ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির দাঙ্গা। ধর্মের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে যেয়ে আপন ভাইকেও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করবেনা, উস্কানীমূলক মন্তব্য সোস্যাল মিডিয়া কিংবা দুই বন্ধুর মধ্যেও করা থেকে বিরত থেক কিংবা দুই বন্ধুর মধ্যেও করা থেকে বিরত থেকো কারণ সঠিক ইসলামীক জ্ঞান সম্পন্ন আলেমরাই সমাধান দিবে কোরআন-হাদীসের আলোকে, আমি/তুমি/তোমরা নও। আর ধর্মান্ধ হয়ে যেওনা অর্থাৎ কট্টর, যা জানার প্রয়োজন জানার চেষ্টা করবে তবে তোমার সাথে যদি মিল না পাও অযথা বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হইও না। সততার সাথে তোমাদের ধর্ম/আক্বিদা/ইমান নিয়ে থেকো ফলে শিক্ষা নিবে...
* * * অযথা খোঁচা দিয়ে ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকবে, তর্কে না জড়িয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবে, নিজেকে নিজে তখন চৌকস মেধার প্রমাণ দিবে। ধর্ম মিয়ে বাড়াবাড়ি হলে তার সমাধান আলেমরা দিবে সেটাই আগে অবগত হলে।
---------------------------------------------------------
শাহীদুল আলম
লেখক ও শিক্ষক,
নানুপুর মজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা।
নানুপুর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
মন্তব্যসমূহ