সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অলিক মহাশক্তির সন্ধানেই বাউলরা প্রেম ও বিশ্বাস নিয়ে মাজার সঙ্গীত গায় | আমাদের শিল্পসাহিত্য

  • নজরুল ইসলাম তোফা:-

বাউল সম্প্রদায়ের বিশ্বাস বাউল সঙ্গীত কিংবা মাজার সঙ্গীতই একটি বিশেষ ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টিও হয়েছে বাংলার মাটিতেই। বাউল কূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্যেই যেন বাউল মতের পরিচিতি লাভ করেছে। এ বাউল গান যেমন জীবন দর্শনের সঙ্গেই সম্পর্কিত, তেমনি বলা যায় সুর সমৃদ্ধ। এ মাজার বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছ্র সাধনার জীবন আর তাদের জনপ্রিয় লোকজ বাদ্যযন্ত্র একতারা নিয়ে গান বাজিয়ে ও গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। মাজার প্রেমী সাধারণ নারী এবং পুরুষদের সুরের জগতে প্রবেশ করার আগেই যেন ধ্যান মগ্ন হয়ে যান। পরে তারাই ইহজগতের ও পরজগতের অশেষ ফায়দা হাসিলের জন্য এক সুমহান লক্ষ্যে নিজস্ব আত্মায় যেন নিগূঢ় রহস্য খোঁজে। এই জগতের ধ্যানরত মানুষরাই শুধু আধ্যাত্মিক, তারা পীর আউলিয়ার বিশ্বাসেই অন্তরে ধ্বনিত করে অলিক এক মহা শক্তি। সে শক্তিটাকেই তারা তাদের- ”খোদা” মানে। অন্তরে বিরাজমান সেই খোদা বিশ্বাসে তারা সুর পিপাসু হয়েই ‘মাজারপ্রেমী’ অজস্র হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকে। এমন প্রয়াস সৃষ্টি করেই হোক অথবা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্যই হোক, মন এবং শরীরকে সুস্থ, সতেজ রাখার জন্যই সঙ্গীতের প্রতি গুরত্বের সহিত নান্দনিক আবেদন খোঁজে বা দৃষ্টি রাখে। বহু ধাঁচের গানের দেশ এই বাংলাদেশ। মাজার প্রেমী শত সহস্র বাউলের দেশ, এই বাংলাদেশ। প্রাচীন ইতিহাস এবং ঐত্যিহ্যের বিশাল সমৃদ্ধি বাউল সঙ্গীতের ভান্ডারকে নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী লোক সংস্কৃতির নানা শাখায় বিচরণে বিনোদন পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার দেশ, ‘সোনার বাংলাদেশ’। এমন মাজার সংস্কৃতিতেই আগর বাতি, মোম বাতি, জালিয়ে কিংবা নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণেই রংবেরংয়ের বিভিন্ন প্রকারের বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োগ ঘটিয়ে আলোক উজ্জ্বল পরিবেশেই ভক্ত এবং মুরীদ গণদের সারা রাত্রি বিনোদন প্রদান করে থাকে। এ সমাবেশের মধ্যে তারা খোদা’র প্রতি শত সহস্র হৃদয় নিংড়ানো প্রেম-ভালোবাসা’র গভীর এক রহস্য খোঁজে পায়। এ ধ্যানমগ্ন হওয়া মানুষরাই আনন্দ-উল্লাস, বিরহ বা তাদের অন্তর শীতল করার জন্য যুগ যুগ ধরে আধ্যাত্মিকতার এমন এ লোকজ সঙ্গীতের আয়োজন করে থাকে। সুতরাং- বাউলরাই নাকি ওলী, তাই বলতেই হয়- ওলী আওলিয়ার দেশ এই বাংলাদেশ।
২০০৫ সালে “ইউনেস্কো” বিশ্বের মৌখিক ও দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল সঙ্গীতকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করেছে। এই বাংলাদেশে বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ সৃজনশীল সাধকদের মধ্যে ‘বাউল সম্প্রদায়’ অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এই সম্প্রদায় মূলত দেহ-সাধনা করে এবং সঙ্গীতের মাধ্যমেই সেই দেহ-সাধনার কথা প্রকাশ ও প্রচার করে। বাউলদের রচিত সঙ্গীতে ভাবের গভীরতা, সুরের মাধুর্য, বাণীর সার্বজনীন মানবিক আবেদন বিশ্ববাসীকে যেন এক মহামিলনের মন্ত্রে আহ্বান করে। আবার তাদেরকেই ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘ইউনেস্কো’ বাংলার বাউল সঙ্গীতকে দি রিপ্রেজেন্টিটিভ অব দি ইন্টানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির তালিকা ভুক্ত করেছে।অবশ্য তারও আগেই বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাটের দশক হতেই যেন ইউরোপ-আমেরিকার নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউলগান ও বাউলদের সাধনপদ্ধতি নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি এই বাংলার বাউলগান পরিবেশন করতে গ্রামের বাউল সাধকশিল্পীগণ বিভিন্ন দেশ-বিদেশেও ভ্রমণ করেছে। তবে, জাতীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাউলদের সাধনা কিংবা সঙ্গীত সম্পর্কে আগ্রহের সূচনা হয়ে ছিল প্রাথমিক পর্যায়েই কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, ইন্দিরা দেবী, সরলা দেবী অথবা নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের তৎপরতায়, পরবর্তীকালেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার বাউল’ বা বাউল সম্পর্কে বিশেষভাবে বিশ্ববাসীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে ছিল, এমনকি তাঁর নিজের রচনাতেও ভাবসম্পদ হিসেবে বাউলগানের ভাবাদর্শ গ্রহণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুর গৃহীত হয়েছিল বাউল গগন হরকার গান হতে। তাই তো এ বাংলাদেশের সঙ্গীত- “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”।
প্রত্যন্ত গ্রাম এবং শহরের মাজারে বাউলদের কাছে গিয়ে আতিথ্য গ্রহণ অথবা রাত্রি বাস করেছে যারা। তারাই তো তাদের এমন অনভ্যস্ত জীবন এবং সেই জীবন যাপন করার কষ্টকর কাহিনী আবার তাদের জীবনযাত্রার অনেক স্বাদ নেয়ার ইতিহাসটাও যেন কপচাতে পারেন। তেমনিই এক বাউল প্রেমী, সঙ্গীত পাগল মানুষ শফিকুল ইসলাম শফি’র সহিত দু’দন্ড আলাপ আলোচনায় অনেক নিগূঢ় তত্ত্ব উঠে আসে। তিনি বলেন, মাজারে কতটা কি দেখেছি, আবার কি পেয়েছি তাহয়তো ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়, তবে সবাই তা বুঝবেনও না। তবে একটা কথা সঠিক যে, তাদের কাছে গিয়ে যা বুঝেছি তা হলো, তারা গভীর বিশ্বাস আর মনের প্রসারতা নিয়েই এই পথে থাকে।চরম দারিদ্র্যতা রয়েছে তাদের কিন্তু মন একেবারেই খোলা আকাশের মতো। সুর জগতে তারা বিচরণের মাধ্যমে যেন খোদার নিগূঢ় ভালোবাসা পেয়ে থাকে। একটু অতীতের দিকেও যদি দৃষ্টি দিই- তা হলে বলা যায়, বাংলায় আবহমান কাল থেকেই নানা শ্রেণী ও বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষ বসবাস করলেও, এখন যেন মাজারে মুসলমানদের পরিমানটা খুবই বেশী। কিন্তু এক সময়েই দেখা যায় বৌদ্ধ ও হিন্দুদের আধিপত্য ছিল তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই দেশের সেন বংশের পর থেকে ইসলাম প্রচার কিংবা প্রসার ঘটেছে। আর ঠিক তখন থেকেই- অনেক পীর, ওলি ও আউলিয়ার আবিভাব ঘটে থাকে। সুতরাং তাদের মৃত্যুর পরেই সমাধিস্হলে মাজার রূপ নেয়। মাজার গুলোতে ধিরে ধিরেই বিনোদন পূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ দেশের ৬৪ জেলায় ছোট বড় অনেক মজার এবং তার বিনোদনের ইতিহাসও রয়েছে। এমন এই ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে খন্ড খন্ড করে আলোচনায় আনা না গেলেও সমষ্টিগত ভাবেই মাজার সংস্কৃতির গানের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা নিয়ে শ্রদ্ধেয় এক বাউল শিল্পী ও স্বরচিত সঙ্গীত রচয়িতা, গুনিজন শফিকুল ইসলাম শফিকের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। এই দেশের সঙ্গীতের গৌরবময় ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গড়ে না উঠলে সম্ভব হতোনা এমন মাজার সংস্কৃতি। মাজার সংস্কৃতির সঙ্গীত আজকে গুরুত্ব পূর্ণ সঙ্গীত বিনোদনের অঙ্গও বলা যেতে পারে। এমন এ সঙ্গীত আবার বিভিন্ন উপাদানেই মাজারকে সমৃদ্ধ করেছে। এই সকল উপাদানে শ্রুতি, স্বর, রাগ, গ্রাম, অলঙ্কার, রস, বর্ণ, ভাব ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত না করলে- মাজারের বিনোদন পূর্ণতা পেতনা। এই সংগীতের এমন সকল উপাদানের মহিমা বা মাধুর্য’কে ইতিহাসের নিরীখেই আজো মানুষের কাছে মাজার বাউলগণেরা অক্লান্ত ভাবে এ সঙ্গীতের আধ্যাত্মিকতা অনুশীলন করছে। অন্যদিকে মাজারভক্ত অনেকে সঙ্গীতের ইতিহাসের বিচিত্র উপাদান সংগ্রহেও ব্যস্ত আছে। এ ভাবে যেন আরো রচিত হচ্ছে এ মাজার ভিত্তিক সঙ্গীত শাস্ত্রের নানা রূপ নানা দিক। আসলে বলা যায়, আদিম যুগ থেকে ক্রমবিবর্তনের মাঝ দিয়েই বর্তমান যুগ পর্যন্ত যে এক ধারাবাহিকতা সঙ্গীতের ভেতর পাওয়া যায়, সেটাই হলো সঙ্গীতের ইতিহাস। তেমনি ভাবেই দিনে দিনে এই দেশে এসেছে মাজার সংস্কৃতি। সাধারণত মানুষের মন, চিন্তা এবং তাদের ভাবের রাজ্যেই যেন অহর্নিশি বিচরণের সংস্কৃতিই- এই মাজার বিনোদন। তাই তাদের এ সঙ্গীতই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। সঙ্গীত মানুষকে জন্ম-মৃত্যুর পারে নিয়ে যায় এবং তাদেরকেই শাশ্বত শান্তি দান করে। বাংলার “বাউল”, বাউল মত কিংবা বাউলসঙ্গীত তথা বাউলগান নিয়ে নানা জনের নানা মত প্রচলিত। এই মতানৈক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে “বাউল” শব্দটি। আসলে, এমন বাউল শব্দটির অর্থ, তাৎপর্য, উৎপত্তি ইত্যাদি নিয়ে অদ্যাবধি গবেষকরা কোনো সু-নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দিতেও পারে নি। তেমনিও বাউল মতের স্বরূপ-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যেন তাদেরকে কোনো সু-নির্দিষ্ট ধারণা প্রদান করতে পারেনি। নানা জনের নানা মত নিয়েই এমন এ ”বাউল মত” বিষয়ে অমীমাসিংত আলোচনা চলছে কিংবা আগামীতেও তা চলমান থাকবে বলেই ধারণা করা যায়।
মাজারচত্বর ঘিরেই যেন বাউল, ফকিরি এবং মুর্শিদী গানের মূূর্ছনাতেই আড়ম্বরপূর্ণ অনেক গানে মুখরিত থাকে। সঙ্গীতের সরগরম হওয়া বহু মাজারেই তারা যেন বাউল, ফকিরি, মুর্শিদী ধারার আধ্যাত্মিক গান ও সাধনা ভিত্তিক গান গায়। তা ছাড়াও মাজারে বহু ধারার গানও হয়ে থাকে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে। যেমন, লালন গীতি, কবি গান, জারি গান, দোহার গান, হাপু গান, যোগীর গান, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, চর্যা গীতি, মাদারগান, মনসারগান, বারোসাগান, বারমাসি গান, বাইজী গান, ধূয়া গান, টপ্পা গান, কীর্তন,পপ, গজল, ভজন, বিচ্ছেদী, লোক গীতি, ব্লুজ ও নৌকা বাইচের গান সহ ইত্যাদি ধরনের বিনোদনপূর্ণ সঙ্গীত মাজার সংশ্লিষ্ট পরিবেশে মাজার ভক্ত এবং মাজার বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাউল সাধনার এমন প্রকৃতি বিচারে “ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মতে”- জানা যায় যে, খ্রিষ্টীয় সতেরো শতকের মধ্যভাগ হতে বাউল মতের উদ্ভব। গুরু, মৈথুন কিংবা যোগ তিনটিই সমগুরুত্ব পেয়েছে বাউল মতে। তাইতো গুরু, বিন্দু ধারণ কিংবা দম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কথাই বাউল সঙ্গীতে আধ্যাত্মিকতার বহিঃপ্রকাশ। সৎ গুরুর নিকট দীক্ষা না নিলেই যেন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করা অসম্ভব কিংবা বিন্দুধারণে সামর্থ্যই সিদ্ধির প্রকৃষ্ট নিদর্শন। “বাউল” মতে আত্মা এবং পরমাত্মায় অভিন্ন। এমন এ দেহস্থিত আত্মাই-‘মানুষ’, ”মানের মানুষ”, ”রসের মানুষ”, ”অলখ সাঁই”। বাউলের রস স্বরূপ হচ্ছে সাকার দেহের মধ্যেই যেন ‘নিরাকার আনন্দস্বরূপ’ আত্মাতে স্বরূপেই উপলব্ধি করার প্রয়াস। এটিই যেন “আত্মতত্ত্ব”। এর মাধ্যমেই অরূপের কামনায় রূপ সাগরে সাধকদের ডুব দেয়া, তাদের স্বভাব থেকেই ভাবের উত্তরণ। সহজিয়াদের সহজেই সরল মানুষে পরিণত হয়। তারাই সৃষ্টি করে মহা-ভাব কিংবা হৃদয়ে সহজ অবস্থা। এ বাউলেরাই মূলত মাজারে মাজারে সাধনায় সে মহা-ভাব অর্জন করে।
বাংলাদেশের মাজার শব্দটি আরবি থেকে এসেছে। মাজারের শাব্দিক অর্থ “সাক্ষাতের স্হান”। সাধারণ ভাবে এই দেশের মাজার বলতে ওলি-দরবেশ, সুফি-সাধক, পীর-ফকির-বাউলদের কবর স্হানকেই ধরা হয়। বলা যায়, সাধারণ কবর আর মাজারের মধ্যেই একটা বিস্তর পার্থক্যই রয়েছে। মাজার মূলত জাক-জমক একটি বিনোদন পূর্ণ ‘কবর স্হান’। এমন এই স্হানে সাধারণ মানুষের সৌজন্যে যুগ যুগ ধরে যেন বিনোদনের পসরা সাজিয়ে ওরস উৎসব করে। এই উৎসবে সাধারণ মানুষসহ বাউল শিল্পী বা গায়কের আনাগোনার পরিমান সবচেয়ে বেশী। এই মাজারেই যেসব শায়িত ব্যক্তিরা রয়েছে, তাদের অসংখ্য ভক্ত-মুরিদ কিংবা খাদেম যারা থাকে, তারাই যেন আস্তে-আস্তে বিনোদনপূর্ণ এক মাজার চত্বরে পরিনত করে থাকে। তারাই সাধারণ মানুষকে ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আধ্যত্মিকতা, সংস্কার, লোকাচার বা ঝাড়- ফুক সহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজনও করে। এমন মাজার প্রিয় ভক্তকুল মানুষদের অন্তরে অন্তরে গভীর ভাবে আস্হা ও তাদের নির্ভরশীলতা যেন স্হান পায় সেই লক্ষে মাজার বিনোদনের উদ্দেশ্যে মাজারকেই যেন পাকা পোক্ত করে।
আবার শুনা যায়, ব্রিটেনে অনেক জায়গায়তে নাকি ডিজিটাল মাজার নামে বিনোদন নির্ভর বহু মাজার রয়েছে। সে সব মাজারগুলো নির্ধারিত সময়ে চলে। রমজান মাস ছাড়া বছরের বাকি সময়েই ডিজিটাল বাক্সগুলোতেও যেন নাচ হয়, আর তা লাখো-কোটি মানুষরা এই সব বিনোদন উপভোগ করে। এ সকল ডিজিটাল কিংবা কমিউনিটি নাম ধারি বিনোদনপূর্ণ মাজার গুলোতে হাজার হাজার মানুষরা ঢেলে দেয় অঢেল অর্থ, তারা ‘গাঁটের টাকা-পয়সা’ খরচও করে এমন মোকামের উদ্দ্যেশেই। তারা ভাবে, এই ভাবেই যেন তাদের পরকালের মনস্কামনা পূর্ণ হবে। বাউল-সাধনার- “পূর্ণাঙ্গ উদ্ভব কিংবা বিকাশ কাল” হিসেবে সাধারণত ১৪৮৬ থেকেই ১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দসহ বর্তমানে চৈতন্যদেবের সময়কেই শনাক্ত করা হয়। সুতরাং এ কথাও জানা যায়, চৈতন্যদেবের মৈথুনাত্মক সাধন-পদ্ধতি অনুসরণেই আউল চাঁদের শিষ্য “মাধববিধি” বাউলমত প্রবর্তন করে। আবারও মাধববিধির শিষ্য বীরভদ্রের তৎপরতায় এ বাউল মতের বিস্তৃতি ঘটে। যাই হোক, এ বাউল মতের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে ডক্টর আহমদ শরীফ বলেছেন, ‘যে-সব প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ ইসলাম কবুল করে ছিল। আর যে-সব প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ হিন্দু- সমাজ ভুক্ত হয়ে নিজেদের পূর্ব পুরুষের ধর্মা চরণে রত ছিল, তারাই একালে বাউল সম্প্রদায়ভুক্ত হয়েছে। বৌদ্ধ ঐতিহ্যে সাধারণ ‘উল্টরাধিকার’ ছিল বলেই হিন্দু-মুসলমানদেের মিলনে “বাউল মত” গড়ে উঠতে পেরেছে’।

বাউল তত্ত্বে এবং সাধনায় প্রচলিত মূল্যবোধ কিংবা আচারকে বিপরীত রূপে আদর্শায়িত করা হয়। তাই প্রচলিত শাস্ত্রবিরোধী সাধনা নানা বৈচিত্র্য-মত রূপে বাউল জীবনচর্যা বিকৃতি করেই যেন রচনা করেছে। তা হলো যে অলৌকিক ঈশ্বর, দেহব্যতিরিক্ত আত্মা, স্বর্গাদি পরলোকে অবিশ্বাসী, বাউল ইহবাদী কিংবা দেহবাদী ইত্যাদি। তবে, যুক্তি যুক্ত অর্থেই বলি আর্থ- সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিধিবিধানের আলোকে প্রতিবাদী মানুষেরা বাউল মতবাদ দিনে দিনেই গ্রহণ করছে। বাউলের গাওয়া গানের পাশা পাশিই মহিলা বাউলরা মাজারে থেকে গান করে। এ বাউলানিদের জীবন যাপনও অনেক ক্ষেত্রে হয় নাকি রোমান্টিক। তাদের এমন জীবনকেই বিপরীত রূপে আদর্শায়িত করে কেউ কেউ। আবার সঙ্গী হিসেবে সাধন সঙ্গিনী হওয়াটাকেও যুুুুক্তিযুক্ত মনে করেছে কেউ কেউ। কি যায় আসে যুক্তিতর্কে সাধনার মূল লক্ষ নাকি খোদা কিংবা ঈশ্বরকে সন্তুষ্টি করা। তাইতো তারা এ বাউল সাধনায় বাউলরা সাধনসঙ্গিনী করে যেন ধ্যানজ্ঞানে মগ্ন হওয়ার চেতনা খোঁজে। এসব মাজারের অনেক আখড়ায় গিজগিজ করে অগনিত মানুষ, তারা সেই সব আখড়ায় প্রান খুলে গান গায় বা ভাববাদী কথা বলে অনেক শ্রোতার মনের মণিকোঠায় স্হান পায়। বাউলদের সঙ্গে বাউলানি’রা লালনের বহু ভাববাদী এবং বিচ্ছেদী গানের এক সমন্বয়ী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে। একাধিক ব্যক্তির পরিশ্রমেই একএকটি গানের জন্ম হয় মাজারে। প্রত্যেক গানই এক সঙ্গীত স্রষ্টার কাছে নিজস্ব সন্তান সমতুল্য। এখানে- গীতি কবি, সুরকার ও কণ্ঠ শিল্পীর ভূমিকা কারও চেয়ে কারও কম নয়। একটি গানের জন্ম সেতো পরিবেশ গত ভাবে অন্তর থেকেই। মাজারকেন্দ্রিক স্বরচিত সঙ্গীতগুলো প্রায়ই যেন ভক্ত বৃন্দের নিজস্ব লেখা চেষ্টা থাকে। বর্তমানে মাজার কেন্দ্রিক বহু গান গুলো বিভিন্ন শিল্পীর কন্ঠে অডিও এ্যালবাম কিংবা সিডি করে বের হচ্ছে। তার বিক্রিও যে কম হচ্ছে এমন বলা যাবেনা। সুতরাং এ মাজারের গানই বাংলার সঙ্গীত এবং সংস্কৃতির এক উল্লেখ যোগ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত। তাই এমন মাজার মুলত অসাম্প্রদায়িক। এখানে- সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও গোত্রের মানুষরা নিজস্ব ধর্ম বা বিনোদনের উদ্দ্যেশেই যায়। ওলী বাবার কাছেই কোনও বিভেদ নেই। তিনি নাকি সবার ডাকে সাড়া দেন। সেই ডাক যদি অন্তরের ডাক হয়ে থাকে।
ধর্মকে উপজীব্য করে তারা সাধারণ মানুষদের দীর্ঘ কালের বিশ্বাস, মূল্যবোধ কিংবা তাদের বিনোদনের রীতিনীতির এরকম সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে বহন করে আসছে। অস্বীকার করবার উপায় নেই, এই মাজার সঙ্গীতের বিনোদন- আজও কোটি কোটি মানুষদের অন্তরকে স্পর্শ করে কিংবা এই সংস্কৃতি শ্রোতাদের অন্তরে সারা জীবন অক্ষত থাকবে। সুতরাং তাদের সুখে দুঃখে, প্রেরণা, স্বপ্ন ও প্রেমে সঙ্গীতই সব সময় বন্ধুর মতো। তাদের ভাল লাগা এক একটি “মাজার সঙ্গীত” যেন সারা জীবন পথ চলার নিত্য সঙ্গী।

লেখক: নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

৫২’র ভাষা শহীদদের জীবনী : রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউর | আমাদের শিল্পসাহিত্য

শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ এর জন্ম ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর। গ্রামের নাম-পারিল (বতর্মানে যার নামকরন করা হয়েছে রফিকনগর), থানা- সিংগাইর, জেলা- মানিকগঞ্জ। তার পিতার নাম- আব্দুল লতিফ, মাতার নাম- রাফিজা খাতুন। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রফিক উদ্দিন আহমদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার বড়। তিনি মানিকগঞ্জ বায়রা কলেজ থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রনাথ কলেজে আই কম পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। কলেজের পাঠ ত্যাগ করে ঢাকায় এসে পিতার সঙ্গে প্রেস পরিচালনায় যোগ দেন। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শাসকগোষ্ঠীর জারীকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে বিক্ষোভ মিছিল হয় সেখানে তিনি অংশগ্রহন করেন।পুলিশের বেদম লাঠিচার্জ ও কাদানে গ্যাসের কারনে অন্যান্যদের সাথে তিনিও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছেড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে আশ্রয়গ্রহন করতে যান। এ সময়ে পুলিশের একটু গুলী সরাসরি তার মাথায় আঘাত হানে ও তিনি সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সম্ভবত ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা রফিক উদ্দিন আহমদই লাভ করেন। তাকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে পরবর্তীতে তার কবর চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি। শহীদ আব্দ...

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি, যোগ্যতা এবং প্রস্তুতি জেনে নিন এক নজরে

✍️অনেকটা বিসিএসের আদলে নেয়া হয় এই নিয়োগ পরীক্ষাটি। 📌সারাদেশে নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরিসহ  প্রায় ৩৬ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক।  📌আর সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সাল থেকে সরকার কর্তৃক এনটিআরসিএ (NTRCA) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন নিয়োগ পরীক্ষা চালু করেছে। 📌দেশের কোন বেসরকারি বিদ্যালয় বা কলেজে এই নিবন্ধন ছাড়া চাকরীর কোন সুযোগ নেই। তাই শিক্ষকতায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক দিতেই হবে। ✍️শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যোগ্যতাঃ ________________________ 📌শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কলেজ ও স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আপনাকে কমপক্ষে স্নাতক পাস হতে হবে। আর স্কুল পর্যায় -২ এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আপনাকে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হবে। 📌তবে যারা সদ্য পাস করেছে সেসব প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রশংসাপত্র, মার্কশিট, প্রবেশপত্রসহ আবেদন করতে পারবেন। 📌নিবন্ধন পরীক্ষায় আবেদনে...

কবিতার পাণ্ডুলিপি তৈরি করার সেরা কৌশল : জেনে নিন এক নজরে

কবিতা লেখা অনেকেরই শখ। তবে সেই কবিতাগুলো যদি বই হিসেবে প্রকাশ করতে চান, তাহলে প্রয়োজন পাণ্ডুলিপি। অনেকেই কবিতা লিখে রাখেন খাতায়, মোবাইলের নোটে বা ফেসবুকে পোস্ট আকারে। কিন্তু সেগুলো পাণ্ডুলিপিতে রূপ না দেওয়ায় কখনো বই হয়ে ওঠে না। আজ আমরা জানব—   👉 কবিতার পাণ্ডুলিপি কী? 👉 কীভাবে কবিতার পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন?  👉 কবিতার পাণ্ডুলিপির আদর্শ কাঠামো কোনটি? 👉 কবিতার পাণ্ডুলিপি আকর্ষণীয় করার জন্য কার্যকর কিছু কৌশল! ক) কবিতার পাণ্ডুলিপি কী? কবিতার পাণ্ডুলিপি হলো বইয়ের জন্য প্রস্তুত একটি গোছানো খসড়া। এখানে কবিতাগুলো একটি পরিকল্পিত কাঠামো অনুযায়ী সাজানো থাকে, যেন প্রকাশক তা সহজেই বই হিসেবে প্রকাশ করতে পারেন। কবিতার পাণ্ডুলিপিতে থাকে: ভূমিকা বা কবির কথা, উৎসর্গ বা কৃতজ্ঞতা, কবিতাগুলোর ধারাবাহিক ও বিষয়ভিত্তিক বিন্যাস, প্রতিটি কবিতার নির্ভুল নাম ও বানান, শেষে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনী। খ) কীভাবে কবিতার পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন? নিচে ধাপে ধাপে পাণ্ডুলিপি তৈরির প্রক্রিয়া দেওয়া হলো: 👉 ধাপ ১: কবিতাগুলো সংগ্রহ ও নির্বাচন: আপনার লেখা সব কবিতা একত্রিত করুন। টাইপ করে একটি ডকুমেন্টে নিয়ে আসুন। মানসম্প...

রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি তৈরি করার সেরা কৌশল - জেনে নিন এক নজরে

রহস্য উপন্যাস মানেই পাঠককে একটা অজানা কিছুর পেছনে টেনে নেওয়া। এখানে প্রতিটি চরিত্র সন্দেহভাজন, প্রতিটি ক্লু বিভ্রান্তিকর, আর সমাপ্তি এমন, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আর সেই কাজটি শুরু হয় একটি শক্তিশালী পাণ্ডুলিপি দিয়ে। আজ আমরা জানব— 👉 রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি কী 👉 কীভাবে একটি মানসম্পন্ন রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন?  👉 আদর্শ রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির কাঠামো কেমন হওয়া উচিত?  👉 রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিকে আরও আকর্ষণীয় করার কৌশল! ক) রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি কী? রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি হলো একটি পূর্ণাঙ্গ, গুছানো ও প্রকাশযোগ্য খসড়া। এখানে একটি রহস্য ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়। এতে কাহিনির সূচনা, ক্লু, সন্দেহভাজন চরিত্র, বিভ্রান্তি, তদন্ত এবং সমাধান—সবকিছু সুনির্দিষ্টভাবে গাঁথা থাকে। পাঠক যেন প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়ে একধরনের মানসিক উত্তেজনায় থাকে। খ) কীভাবে একটি মানসম্পন্ন রহস্য উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন? ✅  শুরুতেই রহস্য তৈরি করুন: গল্প শুরুতেই এমন একটি ঘটনার ইঙ্গিত দিন যা পাঠকের কৌতূহল জাগায়। যেমন: সকালবেলা চায়ের কাপের পাশে একটা চিঠি পড়ে ছিল। তাতে লেখা: ‘আমি...

শব্দকথা সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫ এর জন্য বই আহ্বান

৩য় বারের মতো শব্দকথা প্রকাশন-এর উদ্যােগে আটটি বিভাগে "শব্দকথা সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫" প্রদানের জন্য বই আহ্বান করা হয়েছে।  ✅ বিভাগগুলো হলো: ১। কবিতা ২। উপন্যাস ৩। প্রবন্ধ ও গবেষণা ৪। শিশু-কিশোর সাহিত্য  ৫। সায়েন্স ফিকশন  ৬। ছোটোগল্প  ৭। অনুবাদ সাহিত্য  ৮। আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনী  ✔️দিনব্যাপী একটি জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আটটি বিভাগে নির্বাচিত লেখকগণকে সম্মাননা, ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সম্মাননাপত্র প্রদান করা হবে। ✔️২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে রচিত মৌলিক গ্রন্থসমূহ প্রতিযোগিতার জন্য বিবেচিত হবে। ✔️প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণেচ্ছুদের বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। ✔বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ✔️বই জমা দেওয়ার পর যে কোনো পর্যায়ে অথবা পুরস্কার প্রদানের পর যদি অবগত হওয়া যায় যে, কোনো বই অন্য কোনো বইয়ের অনুকরণ অথবা আংশিক প্রতিরূপে রচিত, সেক্ষেত্রে বইটি বাছাই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার এবং পুরস্কার প্রত্যাহারের অধিকার বিচারকমণ্ডলীর সংরক্ষিত থাকবে। ✔️পুরস্কারের যে কোনো পর্যায়ে বাছাইয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির রচ...

প্রজন্মের জন্য 'চিরকুট' - শাহীদুল আলম | আমাদের শিল্পসাহিত্য

প্রিয়,  দুনিয়ার সকল বাংলা ভাষাভাষী। যাঁরা এই চিরকুট পড়া শুরু করতে যাচ্ছো, যাদের এই লেখা পড়তে কোনো কষ্ট হয়না এমনকি আগামী প্রজন্মের জ্ঞানপিপাসু, অনুসন্ধানী নব তরুণ, যারা মেধা বিকশিত হওয়ার পথে ও ভালোমন্দ বিচার করার সক্ষমতা অর্জন করেছো। যারা সত্যকে জানার জন্য উদগ্রীব থাকে প্রতিনিয়ত, তাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালামসহ একরাশ অগ্রিম শুভেচ্ছা ও চিরকুট পড়ার ভুবনে সু-স্বাগতম।  তোমাদের জন্য আমার কিছু কথা ভবিষ্যতের জন্য বলে যেতে চাই, কিছু কথা রেখে যেতে চাই, যে কথাগুলো হবে  তোমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য, জীবন চলার পথে শক্তি ও মুক্তি আবার হয়তো  মহাচিন্তার কারণ। তবে জেনে রেখো এটাই সত্য ও বাস্তবতার নিরিখে লেখা অপ্রিয় সত্য বাণীই হবে তোমাদের আগামীর পথচলার, ভবিষ্যৎ গড়ার পথনির্দেশক। যদি এই চিরকুটের কোনো চরণ তোমাদের জীবন চলার পথে এগিয়ে যাওয়ার কারণ কিংবা কাজে এসেছে মনেহয় তাহলেই হবে আমার লিখে যাওয়া চিরকুটের সার্থকতা।  শুরুতে বলতে চাই "চিরকুটটা" সম্পূর্ণ পড়ার মনমানসিকতা ও ধৈর্য ধরে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি লাইন পড়তে হবে দ্রুত পড়তে যেয়ে হয়তো কোনো লাইন বাদ দিয়ে চলে যাবে ফলে মূল বিষয়বস্তু বুঝতে ব...

পাণ্ডুলিপি কী এবং কীভাবে প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন?

প্রথম বই প্রকাশ করার স্বপ্ন সব লেখকের মনেই থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ পাণ্ডুলিপি তৈরি করা। ব্যাপারটি অনেকের কাছে কঠিন ও জটিল মনে হয়। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সহজভাবে বুঝতে পারবেন পাণ্ডুলিপি কী, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে গুছিয়ে তৈরি করবেন আপনার প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপি।   👉 পাণ্ডুলিপি কী? বই প্রকাশ করার আগে যেটি তৈরি করা হয়, সেটিই পাণ্ডুলিপি। এটি আপনার বইয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া। এটি হতে পারে হাতে লেখা অথবা টাইপ করা। তবে ডিজিটাল এই যুগে টাইপ করা পাণ্ডুলিপি বেশি গ্রহণযোগ্য। পাণ্ডুলিপিতে বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত লেখা থাকে, অধ্যায়/পর্ব/অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাজানো থাকে, লেখকের ধারণা অনুযায়ী নাম, ভূমিকা, উৎসর্গ, সূচিপত্র ইত্যাদি থাকে। পাণ্ডুলিপিই প্রকাশকের হাতে যায় বই প্রকাশের জন্য। এটি প্রকাশযোগ্য কিনা, তা বিচার হয় এই পাণ্ডুলিপির ভিত্তিতেই।  👉 কীভাবে পাণ্ডুলিপি তৈরি করবেন? প্রথমবারের মতো পাণ্ডুলিপি বানাতে গিয়ে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কাজটি একদমই কঠিন নয়, যদি আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করেন: ১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন (আপনি কী লিখতে চান): প্র...

বিশেষ কাহিনী চিত্র ❝প্রেম বলে কিছু নেই❞ দেখতে চোখ রাখুন এসএটিভি'র পর্দায়

কাজী সাইফ আহমেদের নির্মাণে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ কাহিনী চিত্র ❝প্রেম বলে কিছু নেই❞ দেখবেন ঈদের ৬ষ্ঠ দিন রাত ৮:টায়। রচনা: পাভেল ইসলাম   অভিনয়ে:  গোলাম কিবরিয়া তানভীর, মাফতোহা জান্নাত জীম, পাভেল ইসলাম, সঞ্জয় রাজ প্রমুখ। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনায় : সোহাগ খান এসকে                 ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক: জাহিদ হাসান আনন               নির্বাহী প্রযোজক : ফাল্গুনী মুখার্জী  প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান :  অরোরা অ্যাড মিডিয়া                      একটি শঙ্খচিল এন্টারটেইনমেন্ট নির্মাণ   ।           

আর্টলিট পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪-এর জন্য পাণ্ডুলিপি আহ্বান

আর্টলিট পাবলিকেশন আয়োজন করছে 'আর্টলিট পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪'। সারাদেশের যেকোনো লেখক যেকোনো বিষয়ের পাণ্ডুলিপি জমা দিতে পারবেন। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী পাণ্ডুলিপির সেরা ১০ লেখক পাবেন অগ্রিম রয়্যালিটি, বইয়ের সৌজন্য কপি-সহ নানান সুবিধা। এছাড়া নির্বাচিত ৩০ পাণ্ডুলিপির লেখকরা পাচ্ছেন বই প্রকাশে বিশেষ সুযোগ! 👉 প্রতিযোগিতার নিয়মাবলি:> > ১. পাণ্ডুলিপিটি হতে হবে মৌলিক ও অপ্রকাশিত। ২. লেখক চাইলে যেকোনো ক্যাটাগরির যেকোনো বিভাগে যেকোনো সংখ্যক পাণ্ডুলিপি পাঠাতে পারবেন। ৩. সকল বিভাগের পাণ্ডুলিপির শব্দসংখ্যা উন্মুক্ত।  ৪. গুছিয়ে পাণ্ডুলিপিটি পাঠাতে হবে। যেমন: বইয়ের নাম, লেখক নাম, ফ্ল্যাপ, উৎসর্গ, সূচিপত্র, পৃষ্ঠাসংখ্যা, লেখার শিরোনাম, কনটেন্ট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সকল বিষয় থাকতে হবে। ৫. পাণ্ডুলিপির সাথে লেখকের ছবি, সংক্ষিপ্ত পরিচয়, প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল অ্যাড্রেস পাঠাতে হবে। ৬. পাণ্ডুলিপি পাঠানোর সময় ইমেইলের সাব্জেক্টের ঘরে ক্যাটাগরি ও বিভাগের নাম উল্লেখ করতে হবে। ৭. পাণ্ডুলিপি SutonnyMJ অথবা ইউনিকোড ফন্টে কম্পোজ করে পাঠাতে হবে। ৮. পাণ্ডুলিপি পাঠানোর ইমেইল ঠিকানা: ar...

আসছে বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক নাটক ‘পতাকা'

নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত এবং নাগরিক ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসার আকুতি কতটুকু এমন প্রশ্নকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নাটক 'পতাকা’। রুদ্র মাহফুজের রচনা ও কাজী সাইফ আহমেদের পরিচালনায় বিজয় দিবসের বিশেষ এই নাটকটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ প্রতিভবান অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব ও মডেল অভিনেত্রী সাফা কবির। সম্প্রতি উত্তরা, ৩০০ ফিট, শাহবাগ সহ ঢাকার বেশ কয়েকটি লোকেশনে নাটকটির দৃশ্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। নাটক প্রসঙ্গে তৌসিফ বলেন,‘শরাফত নামের যে চরিত্রটি আমি করেছি সে নদীভাঙা এক হতভাগ্য। কাজের সন্ধানে সে ঢাকায় এসে মৌসুমী পণ্যের হকারে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে সে পতাকা বিক্রি শুরু করে এবং ঘটনা ক্রমে লক্ষ্য করে বিপন্ন-পরাস্ত দেশপ্রেমকে। একই প্রসঙ্গে সাফা কবির বলেন,‘প্রথমেই বলবো, এটি গতানুগতিক কোনো গল্পের নাটক নয়। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়েছি এবং নিজেকে ভাঙতে পারলাম এই প্রথম। নাটকটি শৈল্পিক অভিমুখতায় নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে। বিশেষ করে পরিচালক সাইফ ভাইয়ের ইউনিট ছিল অসাধারন। সবাই ছিল খুব বেশি কো-অপারেটিভ। তরুণ নির্দেশক কাজী স...